মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৩

গরমে হারবাল ফেসিয়াল

ত্বকের যত্নে কেমিক্যালের ব্যবহার দিন দিন গুটিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে হারবালের ব্যবহার। হারবালে ত্বকের যত্ন হয় প্রাকৃতিক উপায়ে। ত্বকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসে না। তাই ত্বকের সজীবতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হারবাল ফেসিয়ালের গুরুত্ব অপরিসীমই বটে!
ত্বকের যত্নের বিষয়ে প্রথমেই আমরা ফেসিয়ালের বিষয়টি চিন্তা করি। অনেকে ধারণা করে, ফেসিয়াল মানেই ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানো। কিন্তু ফেসিয়ালের প্রকৃত বিষয়টি হলো ত্বকের পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি ও ত্বকের গভীর যত্ন বাড়ানো। এ যত্নের ওপর নির্ভর করেই আমাদের ফেসিয়াল ও প্যাকগুলোর জন্ম।
হারবাল প্যাকগুলো ব্যবহারের আগে যদি আমরা

আমাদের ত্বকে ম্যাসাজ ক্রিম ব্যবহার করি বা স্ক্রাবিং করে নিই তবে, আমাদের ত্বকে প্যাকগুলোর আউটলুক অনেক বেশি পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে সব ধরনের ফেসিয়ালের আগে নিজের ত্বক কী চাইছে তা বুঝে নিতে হবে। অর্থাৎ কোন ত্বকের জন্য কোন ফেসপ্যাক বানানো হচ্ছে তা জেনে নেওয়া জরুরি। ফেসপ্যাক ব্যবহারের আগে মৌসুমের দিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখা জরুরি। কারণ আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুসারে একেক সময়ের ফেসপ্যাক একেক রকম হয়ে থাকে। এখন গরম চলছে। তাই আমাদের দৈনন্দিন বা সাপ্তাহিক ফেসপ্যাকগুলো কেমন হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। গরমে আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। গরমে তৈলাক্ত ত্বকের আদ্রতা নিয়ে ভাবা খুবই জরুরি। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের আনুপাতিক কম সমস্যায় পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে মাঝামাঝি ত্বকের অধিকারীদের সব ঋতু বা মৌসুমেই কম ঝুঁকিতে থাকতে দেখা যায়। তবে আমাদের এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে, অবশ্যই মৌসুম অনুযায়ী আমাদের ত্বকের যত্ন আলাদা আলাদা হওয়া প্রয়োজন। তাই কোনো প্যাক ব্যবহারের আগেই আমাদের ত্বকের টোন কেমন তা বুঝে নিতে হবে।

নিজের ত্বক নির্বাচন : আপনার ত্বক তৈলাক্ত নাকি খুব শুষ্ক, হারবাল ফেসপ্যাক ব্যবহারের আগে তা জেনে নিন। মুখমণ্ডলের কপাল অংশ থেকে নাক ও থুঁতনি অংশ পর্যন্ত যদি তেল আসে, তবে তা টিস্যু পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে মুচে ফেলুন। ওই স্থানগুলো টিস্যু পেপারে মোছার পর যদি টিস্যু পেপার ভিজে যেতে দেখা যায় তবে বুঝতে হবে ত্বকে ঘামের পরিমাণ বেশি। যদি টিস্যু পেপারটিতে কালছে ভাব আসে তাহলে বুঝতে হবে, আপনার ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত। এ ছাড়াও দুই আঙুলের ব্যবহারে আপনি আপনার ত্বকের ঘাম ও তৈলাক্তভাবের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। ত্বকে তৈলাক্তভাব এলে মুখমণ্ডল, নাকের চারপাশের অংশে চকেচকে ভাব ফুটে উঠবে।
তৈলাক্ত ত্বকের প্যাক : মুলতানি মাটির সঙ্গে একটু শসা, কমলা লেবুর রস ও একটু চন্দনের গুঁড়া দিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগাতে হবে। এ প্যাক ব্যবহারে মুখের ব্রণের ভাব চলে যাবে, কোনো ধরনের ইনফেকশন থাকলে তা দূর হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বল ভাব বৃদ্ধি পাবে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ফ্রুটপ্যাকও ব্যবহার করা যেতে পারে। এ জন্য আপেল, কমলার রস, সামান্য মুলতানি মাটি, একটু টকদই, আর যাদের মধু ব্যবহারে সমস্যা নেই তারা একটু মধু দিয়ে এগুলো একসঙ্গে ব্লেন্ড করে প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
ওই প্যাকগুলো ছাড়া ত্বকের যত্নে ভেজিটেবল প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য শসা, আলু ভালো করে ব্লেন্ড করে তার মধ্যে অল্প পরিমাণ পেঁপে ও মসুর ডাল দিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন। এর সঙ্গে চাইলে সামান্য পরিমাণ চালের গুঁড়া ও একটু টক দই দিয়েও নতুন আরেকটি প্যাক তৈরি করতে পারেন। এ প্যাকটি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে সজীবতার ভাবটি ফুটে উঠতে থাকবে। 


কম্বিনেশন ত্বকের জন্য : কম্বিনেশন ত্বকের জন্য তৈলাক্ত বা শুষ্ক ত্বকের যে কোনো প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তবে ব্যবহারের আগে মৌসুমের দিকে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে। কম্বিনেশন ত্বক গরমের দিনে বেশি তৈলাক্ত ও শীতে বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। তাই মৌসুম অনুযায়ী যে কোনো প্যাক আমরা আমাদের ত্বকে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারি। অর্থাৎ গরমের সময় তৈলাক্ত ত্বকের প্যাক ও শীতের সময় শুষ্ক ত্বকের প্যাকগুলো ব্যবহার করতে হবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য : শুষ্ক ত্বকে ভেজিটেবল ফেসিয়ালটা বেশ জরুরি। তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য গাজরের ব্যবহার খুব উপকারী হতে পারে। এ জন্য প্রথমেই গাজর গ্রেড করে এর মধ্যে সামান্য চালের গুঁড়া দিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া ত্বকে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যালোভেরা থেকে তৈরি জেলটাও শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী। 
সব মিলিয়ে ত্বকের টোন বুঝে প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। প্যাকগুলো ১৫ থেকে ২০ মিনিট ত্বকে মেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করবেন। যাদের শুষ্ক ত্বক তারা অয়েল বেসড ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করবেন।
প্যাকগুলো ছাড়াও কেউ যদি বাজারের হারবাল ফেসিয়ালগুলো ব্যবহার করতে চান তবে, সে পণ্যটি শতভাগ হারবাল কি-না তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেবেন। হারবাল ব্যবহারে ত্বকে কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই অভিজ্ঞ রূপ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন। মনে রাখবেন, বাজারে হারবাল ফেসিয়ালের নামে অনেক কেমিক্যাল ফেসিয়ালও বিক্রি হচ্ছে। তাই পণ্যটা যেন ভালো ব্র্যান্ডের হয় সে দিকেও খেয়াল রাখবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন