বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৩

ছেলেরাও থেমে নেই রূপচর্চায়

রূপচর্চার ধরন একেক জনের কাছে একেক রকম। তবে সংক্ষেপে বলা যায়, সুন্দর করে সবার কাছে নিজেকে উপস্থাপনের কলাকৌশলের প্রক্রিয়াকেই রূপচর্চার একটি অংশ হিসাবে ধরা যায়। শুধু ত্বক পরিচর্যার মাধ্যমে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে না। এর সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ের সমন্নয় ঘটাতে হয়। যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ব্যক্তিত্ব, ত্বকের ভেতরকার পুষ্টির জোগান, স্বাস্থ্য, স্পষ্টভাষী ইত্যাদি।
সময়ের সঙ্গে সবকিছুর পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক।

তাই ছেলেরাও রূপচর্চায় পাল্লা দিয়ে নেমেছে বর্তমান ফ্যাশনের হাল ধরতে। জন্মগত ত্বকের পরিচর্যার প্রতিযোগিতায় নেমেছে তারাও। ফেসিয়াল, মেনিকিউর, পেডিকিউর ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চর্চায় ছেলেদেরও দেখা যায়। রূপচর্চার প্রধান কাজ হলো স্কিনটাকে ঠিক রাখা। অর্থাৎ ত্বকের ময়েশ্চারাইজকে ধরে রাখার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা। জীবিকা অর্জনের তাগিদে কম-বেশি সবাইকেই বাইরে বের হতে হয় নানা কাজে। তখনই ত্বকের উপরিভাগে মরাকোষ, ঘাম, ত্বকের তেল ও ধুলোবালি মাখামাখি হয়ে ত্বককে ঘিরে রাখে। যার ফলে ত্বক হয়ে ওঠে অস্বাস্থ্যকর ও নির্জীব। এতে ত্বকের ওপর দেখা দিতে পারে নানা রকমের সমস্যা, যেমনÑ ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস, পিগমেনটেশন, পিমপলস ইত্যাদি। এর সঠিক সমাধান পেতে বা ত্বকের আর্দ্রতাকে ফিরিয়ে আনতে সঠিক নিয়মের পরিচর্যা করতে হবে। এ তো গেল ত্বকের কথা। কিন্তু চুলের কথা ভুলে গেলে কী চলবে? না, কারণ সাজগোজের বিরাট একটা অংশ হিসাবে জুড়ে থাকে চুল। হেয়ার স্টাইলের পরিবর্তনে আপনার চেহারার সাজগোজে এনে দিতে পারে ভিন্নতা। তাই চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে হতে হবে একটু সচেতন। বাড়িতে বসেই আপনারা চর্চা চালিয়ে যেতে পারেন। বেদানার রস ও আঙুরের রস একসঙ্গে মেশান, এবার পুরো চুলে ১০-১৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এভাবে নিয়মিত করুন সপ্তাহে ১ বার। আবার সিজনেবল ফল দিয়েও রূপচর্চা ভালোভাবে করতে পারেন। পাতিলেবুর রস আধা কাপ আর আনারসের রস ১ টেবিল চামচ ও সিরকা বা ভিনেগার ১ টেবিল চামচ মিলিয়ে ১০-১৫ মিনিট চুলে রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতেও চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং চুলের খুশকিও দূর হবে। চুল পড়া বন্ধ হবে।
রূপচর্চায় বিশেষ দিন : ব্যস্ততার নানা কারণে সব সময় রূপচর্চার সময় হয়ে ওঠে না। তাই ব্যস্ততার মাঝেও রূপচর্চার একটা বিশেষ সময় বের করে নিন। সেই দিনটিতে শুধু হালকা কাজের পাশাপাশি বেশি সময়টা রূপচর্চায় দিন। প্রয়োজনে অভ্যাসে পরিণত করুন এই বিশেষ দিনটি। সারাদিন না হোক অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে পুরোপুরি সময়টা রূপচর্চার জন্য ব্যয় করুন। একদিনের এই রূপচর্চার বিশেষ সময়টি আপনাকে সারা সপ্তাহ রাখবে সজীব ও মনকে রাখবে প্রফুল্ল। প্রয়োজনে রূপচর্চার রুটিন করে ব্যয় করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী মাস্ক ব্যবহার করুন। মাস্ক ব্যবহার করুন মুখমণ্ডল, গলা, ঘাড় এবং হাতের অনাবৃতঅংশে। ত্বককে উদ্দীপ্ত করার জন্য এটি একটি বিশেষ কাজ দেয়। মাস্ক ১০ মিনিটের বেশি ব্যবহার করা ঠিক হবে না। বাইরে থেকে এসে সারা শরীরে ঠাণ্ডা পানির সঙ্গে পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে গোসলের কাজটি তাড়াতাড়ি সেরে নিন। এতে ফ্রেশ লুক আনবে, পাশাপাশি সজীবতাও থাকবে। ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার রাখুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকবে। চুলে শ্যাম্পু করার আগে তেলের সঙ্গে আমলার ১ চামচ রস, মেথি গুঁড়ো ১ চামচ, মেহেদি পাতার গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ, ডিম ১টি মিলিয়ে আধা ঘণ্টা মাথায় রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে।
মেনিকিউর ও পেডিকিউর : হাত-পায়ের অসৌন্দর্যতার কারণে রূপসৌন্দর্যে ভাটা পড়ে। তাই এ জন্য মেনিকিউর, পেডিকিউর জরুরি হয়ে ওঠে। সেজন্য সপ্তাহে ২-৩ দিন আলাদাভাবে সময় বের করে নিন মেনিকিউর, পেডিকিউরের জন্য। বাড়িতে বসেই চালিয়ে যান চর্চা। একটি পাত্রে অল্প গরম পানিতে শ্যাম্পু বা তরল সাবান মিশিয়ে নিন। এই গরম পানিতে হাত-পা ১৫-২০ মিনিট সময় নিয়ে ডুবিয়ে রাখুন। পায়ের ক্ষেত্রে নরম স্ক্রাবার ও পায়ের তলায় পামিস স্টোন ব্যবহার করে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। মরা-চামড়া তুলে নিন ভালোভাবে। এরপর ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে নিন পা ১০ মিনিট সময় নিয়ে। এবার চন্দন প্যাক, নিম প্যাক, শশা প্যাক যেটি আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী বেছে নিন। হাতের ক্ষেত্রেও ঠিক একইভাবে যত্ন নিন। তবে ব্রাশের ক্ষেত্রে পায়ের চেয়েও খুব হালকা নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন। সুঁচালো কোনো জিনিস দিয়ে নখের অংশ পরিষ্কার করে নিন। আর চারপাশ পরিষ্কার করতে টুথব্রাশের ব্যবহার রাখুন। এবার হাত ও পা ভালোভাবে পরিষ্কার করে মুছে নিন। তারপর কিউটিকল সফটনার লাগান। এটি সম্ভব না হলে ভ্যাজলিনের সাহায্যেও ম্যাসাজের কাজটি সেরে নিতে পারেন। এভাবে প্রতিনিয়ত যত্ন নিলে হাত-পায়ের সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।
রূপচর্চায় প্রসাধনীর ব্যবহার : মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও থেমে নেই প্রসাধনীর ব্যবহারের থেকে। তাই বাজারেও ছেলেদের নানা ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী কিছু প্রসাধনী বাজারে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম, হোয়াইট অ্যাকটিভ ক্রিম, ম্যাট ক্রিম, ব্ল্যাক হেডস ক্রিম, হোয়াইট হেডস ক্রিমসহ বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী।
দামের ক্ষেত্রেও বেশ আয়ত্তের মধ্যেই আছে এসব ব্র্যান্ড। ২শ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ২শ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাবে এ ধরনের ক্রিম। এ ছাড়াও ফেসওয়াশ, বডি সাপ (ড্রাই অথবা লিকুইড), হেয়ার ক্রিম, হেয়ার জেল, শ্যাম্পু, তেল, ব্রণ ক্রিম, হারবাল হেয়ার ইত্যাদিও ৫শ ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৮শ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। ব্যক্তিত্ব প্রকাশে পারফিউমের গুণাগুণের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বডি স্প্রেরও গুণ কম নয়, তাই এগুলোই ১শ ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।
সৌন্দর্যচর্চায় খাদ্যের ভ‚মিকা : খাদ্য সৌন্দর্যচর্চার প্রধান অনুষঙ্গ হিসাবে পরিচিত। তাই খাদ্যতালিকা মেনে চলা উচিত। যেমন সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে সুষম খাদ্যের বিকল্প কিছু নেই। প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, আয়রন, প্রোটিন থাকে এমন খাদ্য বাছাই করে নিন খাদ্যের তালিকায়। খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমেই যথাযথ সৌন্দর্যকে ধরে রাখা সম্ভব। তাই কার্বোহাইড্রেট, আমিষ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এ ধরনের খাবার বেছে নিন। তরল খাবার রাখুন খাদ্য তালিকায়। যেমন পানি, গুড়ের শরবত, লেবুর শরবত, ত্রিফলা ভেজানো পানি, নারিকেলের পানি, ডাবের পানি, ইসুবগুলের ভুসি, ফলের জুস, ফলের সালাদ, কাঁচা সবজির সালাদ ইত্যাদি খাবারের প্রতি জোর দিন। লেবু, কমলা ও আঙুর খেতে পারেন পর্যাপ্ত পরিমাণে। এতে পাবেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ও ভিটামিন এ, সি ও ই। এড়িয়ে চলবেন ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার এবং বেশি মসলা দিয়ে তৈরি খাবার। ঝোলাগুড়, মধু এবং অতিরিক্ত চিনি আছে এমন খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। বাড়তি লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। শরীরের চাহিদা পূরণের জন্য যেমন এসব খাবারের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে। তাই খেতে হবে পরিমাণমতো। প্রয়োজনে নিউট্রিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। ভেতর থেকে যেভাবে যত্ন নিতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্যাভ্যাস। তাই আপনি যেভাবে নিজের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলবেন তার প্রতিফলন পাবেন স্পষ্টভাবে আপনারই।

সৌন্দর্যচর্চায় প্রয়োজনীয় টিপস
* ছোট মাছের পুষ্টি বেশি তাই সবসময় ছোট মাছের প্রতি জোর দিন। এটি দামেও কম, পুষ্টিও বেশি। প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করুন।
* খাসির কলিজা, মুরগির কলিজা, হাঁস, মুরগির ডিম, মাছের ডিম খাদ্যতালিকায় রাখুন সপ্তাহে একদিন।
* খাদ্যতালিকায় ডাল রাখুন প্রতিদিন।
* প্রতিদিন এক গ্লাস করে ফলের রস বা জুস, এক গ্লাস দুধ, এক গ্লাস মাঠা এবং ১০ গ্লাস পানি খাবেন।
* সম্ভব হলে শসা, টমেটো, মাশরুম, বিট, গাজর, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি মিলিয়ে সবজি সালাদ বানিয়ে প্রতিদিন সম্ভব না হলে সপ্তাহে দুদিন খাদ্যতালিকায় রাখুন।

ফিটনেস ধরে রাখতে টিপস
* মাংস খেতে চর্বি ছাড়িয়ে নিন। এতে ক্যালোরির পরিমাণ কমে আসবে।
* খালি লবণ খাওয়া ছেড়ে দিন, লবণ খেলে শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা থাকে। তাই এ থেকে বিরত থাকুন।
* মাছ, মাংস, ডিম ভাজা না খেয়ে রসাল করে খান। টোস্টের গুঁড়োয় গড়িয়ে মাছ, মাংস, ডিম, কাবাব এসব খাবার থেকে দূরে থাকুন।
* সকালের নাশতা ভালোভাবে করুন। এক পিস রুটি, সেদ্ধ ডিম ১টি (হাঁস বা মুরগি), যে কোনো তাজা ফল একটি (আপেল, পেয়ারা) রাখুন খাদ্যতালিকায়।
* নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
* ওজন মাপুন সপ্তাহে একবার। ডায়েটিং করার সঙ্গে সঙ্গেই ওজন আয়ত্তে আসবে না বরং ধৈর্য নিয়ে চালিয়ে যান আপনার রুটিন।
* মনে রাখবেন ডায়েটিং মানে না খাওয়া নয়, সব খাবারের পুষ্টির পরিমাণ থাকবে এবং তা পরিমাণমতো।
* শুধু খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব নয়। সময় বের করে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। নির্দিষ্ট সময় নিয়ে এগিয়ে যান। তবেই ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব।

ছেলেদের ত্বক ও চুল
পরিচর্যায় টিপস
* তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যার প্রকোপ থাকে বেশি। তাই এ থেকে সমাধান পেতে ব্রণের ওপর চন্দন বাটা প্রতিদিন দিয়ে রাখুন। উপকার পাবেন।
* পিগমেন্টেশন থেকে মুক্তি পেতে হরীতকী বাটা, আলুর রস, শসার রস, গ্লিসারিন মিলিয়ে দাগের ওপর লাগান একদিন পরপর। এতে উপকার পাবেন।
* মুখে র‌্যাশ বের হলে অড়হর ডাল বাটা পেস্ট করে র‌্যাশের ওপর লাগান। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত করুন।
* হাত-পায়ের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে কমলার খোসা ঘষে নিন। এরপর গ্লিসারিন ব্যবহার করুন।
* ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে বেসনের পেস্ট, মধু ও দুধ মুখের ত্বকে লাগান। এতে ত্বকের বলিরেখা দূর হবে। পাশাপাশি আপনি হবেন লাবণ্যময়।
* শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল ম্যাসাজ করুন। তেলের সঙ্গে আমলা বাটা, বাদাম বাটা, সিরকা মিশিয়ে নিন।
* মেহেদি ও ডিম মিলিয়ে সপ্তাহে অন্তত একদিন লাগান। চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
* চুল কালার না করাই উত্তম কাজ। কারণ চুল কালার করার ফলে চুলের ক্ষতি হতে পারে। চুল রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ত্বক সুস্থতার প্রতীক। শুধু ত্বকই
নয়, নিয়মিত পরিচর্যায় আপনি হয়ে
উঠতে পারেন লাবণ্যময়। তাই
অবহেলা না করে আজই নেমে পড়ুন সৌন্দর্যচর্চায়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন