মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

চুলের যত্ন



চুলের ধরন অনুযায়ী তারতম্য ঘটে চুলের যত্নের। চুলের সুস্থতা ও মসৃণতায় প্রয়োজন ক্লিনজিং চৌনিং ও ময়েশ্চারাইজিং। তাই চুলের যত্ন করার আগে জেনে নেওয়া দরকার আপনার চুলের ধরন। চুল সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন শুষ্ক, স্বাভাবিক ও তৈলাক্ত।
কীভাবে বুঝবেন আপনার চুলের ধরন


স্বাভাবিক চুলের যত্ন :নিয়মিত চুলের যত্ন নিলে চুলের মসৃণতা বজায় থাকে। সপ্তাহে একদিন তেল উষ্ণ গরম করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন ১৫-২০ মিনিট। এরপর গরম পানিতে ভেজানো টাওয়েল ১৫-২০ মিনিট মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এরপর একটি ডিম, ২ চা-চামচ মধু, ২ চা চামচ আমলকীর রস, ২ চা চামচ অলিভ অয়েল, জবা ফুলের রস/পেস্ট, সামান্য গরম পানি একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ২৫-৩০ মিনিট। এরপর পরিষ্কার করে চুল ধুয়ে ফেলুন। পরে চায়ের লিকার, লেবুর রস ও আধা চামচ মধু মিশিয়ে পানিসহ এক মগ করুন। সেটি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং চুল মুছে নিন।
স্বাভাবিক চুলের তেল : দু'ফোঁটা রোজমেরি অয়েল, জোজোক অয়েল, শীতের শুষ্কতার পর বসন্তের বাতাসে চুল হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শ্রীহীন। চুলের হারানো আর্দ্রতা ও মসৃণতা ফিরিয়ে আনতে চাই কন্ডিশনিং। চুলের যত্নে কন্ডিশনার ইচ্ছা করলে আপনি বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন।
কন্ডিশনার :একটি ডিম ফেটিয়ে তাতে এক চামচ শিকামাই পাউডার, থেঁতো করা স্ট্রবেরি। দু'চামচ টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলের জন্য তেল সবচাইতে ভালো কন্ডিশনার।তৈলাক্ত চুলের যত্ন :এ ধরনের চুলে মাথার তালু বেশি তৈলাক্ত থাকে। তাই প্রয়োজন বিশেষ পরিচর্যার। তেলতেলে চুলের অধিকারী হলে সপ্তাহে একদিন উষ্ণ গরম তেল ম্যাসাজ করুন এবং একদিন বাদে একদিন শ্যাম্পু করুন। তৈলাক্ত চুল পরিষ্কারের উপযোগী শ্যাম্পু আপনি বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন। রিঠা, শিকাকাই, আমলা সারারাত ভিজিয়ে পরের দিন ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। তরল মিশ্রণটি শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করুন। সপ্তাহে দু'দিন বাড়িতে তৈরি হেয়ারপ্যাক লাগান। ২ চামচ নিমপাতা গুঁড়া, ২ চামচ মেথিগুঁড়া, ২ চামচ আমলা পাউডার, ২ চা চামচ টকদই, ডিমের সাদা অংশ, ২ চা চামচ উষ্ণ গরম পানি একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানান। পুরো চুলে ঘণ্টাখানেক লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। শেষে চায়ের লিকার দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
তৈলাক্ত চুলের কন্ডিশনার :এক কাপ থেঁতো করা আঙ্গুরের রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে সারারাত রেখে দিন। পরের দিন এতে টকদই মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। একঘণ্টা পর ঠাণ্ডা পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক চুলের যত্ন :চুল শুষ্ক হলে একদিন বাদে একদিন অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে উষ্ণ গরম করে পুরো চুলে ও স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন ২০-২৫ মিনিট। এরপর গরম পানিতে টাওয়েল ভিজিয়ে স্টিচ নিন। ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন এবং কন্ডিশনার লাগান। শেষে চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। যাদের চুল রুক্ষ, শুষ্ক ও লালচে_ তারা একটি জবাফুল বাটা, ২ চামচ মধু ও এক চামচ আমলকী বাটা, টক দই, ডিমের কুসুম, মেথিগুঁড়া, ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে ঘণ্টাখানেক লাগিয়ে রাখুন; তারপর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং কন্ডিশনার লাগিয়ে ৪-৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন হালকাভাবে।
শুষ্ক চুলের কন্ডিশনার :একটি পাকা কলার সঙ্গে এক চা চামচ মধু, আধা চা চামচ দুধের সর ও এক চা চামচ আমন্ড অয়েল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। একঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
খুশকি :খুশকি কোনো রোগ বা রোগের লক্ষণ নয়। এটি স্ক্যাল্পের শুষ্ক চামড়া। যা সবারই কমবেশি হয়ে থাকে। চুল পড়া এবং খুশকি ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনের হয়ে থাকে। বসন্তে এ সমস্যা অনেকেরই দেখা দেয়। নিজের চিরুনি, ব্রাশ, তোয়ালে, বালিশের কভার যথাসাধ্য পরিষ্কার এবং আলাদা রাখুন। মেডিকেটেড শ্যাম্পু, মাইকোনাজোনযুক্ত লোশন, ক্ষেত্রবিশেষে স্টেরয়েড লোশন ব্যবহারে সম্পূর্ণ সেরে যায়। তবে খুশকি নিরাময়ের জন্য ঘরোয়া হারবাল পদ্ধতি অবলম্বন করাই ভালো।
খুশকি নিরাময়ের জন্য :মেথিবাটা, পেঁয়াজের রস, নিমপাতাবাটা, লেবুর রস, টক দই, একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন, ৩০-৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
ষ ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগালেও খুশকি কমে যায়।
ষ তৈলাক্ত খুশকি তাড়াতে মাথায় তেল দেওয়া বন্ধ রাখুন। এন্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুলের গোড়া পরিষ্কার রাখুন একদিন বাদে একদিন, ২ সপ্তাহের মধ্যেই খুশকি চলে যাবে। তবে শুষ্ক চুলের জন্য এটি না করাই ভালো। এন্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে শুষ্ক চুল আরও শুষ্ক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করাই উচিত।
ষ টক দই ও মেহেদি বাটা, লেবুর রস, একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ৩৫-৪৫ মিনিট। পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। ২-৩ বার ব্যবহারে খুশকি চলে যাবে এবং চুল হয়ে উঠবে অনেক সুন্দর। সপ্তাহে একদিন করাই যথেষ্ট। তবে চাইলে ২-৩ দিনও করতে পারেন।
চুল ভালো রাখতে
কম্বিং :ভেজা চুল বেশি আঁচড়াবেন না। ভেজা চুল বেশি আঁচড়ালে চুল টান পড়ার কারণে চুলের আগা ফেটে যায়। ভেজা চুল আঁচড়ানো বা বাঁধা কোনোটিই ঠিক নয়। একান্তই আঁচড়াতে হলে মোটা দাঁতের চিরুনি ও ব্রাশ ব্যবহার করা ভালো। চিরুনির দাঁতের মাথায় ছোট ছোট বল থাকলে ভালো। তাতে স্ক্যাল্পে আঘাত লাগবে না এবং মাথার তালুতে রক্ত সঞ্চালন করবে। তৈলাক্ত চুল হলে বেশিবার আঁচড়াবেন না।
শ্যাম্পু :প্রয়োজনে প্রতিদিন শ্যাম্পু করুন। চুল ভালো রাখতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন পরিচ্ছন্নতা। চুল পরিষ্কার করার সময় শ্যাম্পু ব্যবহারে কৃপণতা করবেন না। চুল ধোবেন প্রচুর পানি দিয়ে। যেন শ্যাম্পু লেগে না থাকে। নিজের চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। আপনার চুলের ধরন ও লাইফস্টাইলের ওপর নির্ভর করে আপনি কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন এবং কতদিন ব্যবহার করবেন।
কন্ডিশনার :শুষ্ক ও সরুচুলে ঠিকমতো কন্ডিশনার ব্যবহার করলে আপনার চুল আপনার কন্ট্রোলে থাকবে। নিজের চুলের ধরন অনুযায়ী কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। কন্ডিশনার পরিমাণ মতো লাগান। বেশি লাগালে চুল নেতিয়ে থাকবে। শ্যাম্পু করার পর মাথা নিচু করে সমস্ত চুল সামনে এনে শুধু চুল ও চুলের আগায় কন্ডিশনার লাগান। ২-৩ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করার পর একমগ পানিতে এক ফোঁটা নারিকেল তেল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। কন্ডিশনারের কাজ করবে। সরিষার তেলও কন্ডিশনার হিসেবে ভালো। কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে লাগিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন