বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪

চোখের স্মোকি আই লুকের সজ্জা


চোখের সাজে স্মোকি লুক নতুন কিছু নয়। সানফ্লাওয়ার ছবিতে সোফিয়া লরেনের চোখের কথা মনে আছে? কয়েক দশক আগের কথা। পারফেক্ট স্মোকি আই বলতে যা বোঝায় সোফিয়ার আই মেকাপ ছিল ঠিক তেমনি। ষাটের দশকে হলিউড চলচ্চিত্রের অনেক নায়িকাই লরেনকে ফলো করতে গিয়ে নিজেদের চোখকে স্মোকি করে তুলতেন। মাঝে সে ট্রেন্ড হারিয়ে গিয়েছিল। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে আই মেকাপে মহাসমারোহে আবার ফিরে এসেছে স্মোকি আই। সৌন্দর্য সচেতন নারীরা নতুন করে লুফে নিয়েছে পুরনো এই

নেত্রসজ্জাকে। আক্ষরিক অর্থে স্মোকি আইয়ের বাংলা করতে গেলে বলতে হবে চোখটাকে ধোঁয়াশে করে তোলা। চেহারায় এক্সপেরিমেন্টাল ও নতুন লুক আনতে অনেকেই নিজেদের চোখকে স্মোকি করে তুলতে চান।
চোখের পাতায় নানা রকম শেডের মিশ্রণে ফুটিয়ে তোলা হয় এই লুক। তবে সাধারণত কালো, সবুজ এবং নীলের কম্বিনেশনই বেশি ব্যবহৃত হয়। কয়েক বছর হয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক মেকাপ ট্রেন্ডে স্মোকি আইজ লুক এখনও হট-হিট। বিশেষ করে বাইরের ফ্যাশন শো’গুলোতে মডেলের মেকাপে এর প্রাধান্য রীতিমতো লক্ষণীয়। কারণ ড্রামাটিক মেকআপ হিসেবে স্মোকি আইয়ের তুলনা হয় না। ন্যুড মেকাপের সঙ্গে ড্রামাটিক স্মোকি আই মেকাপের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় একেবারেই অন্যরকম এক লুক। স্মোকি আইজ আদতে ব্ল্যাক, ম্যাট, ভারি ও ডার্ক মেকআপ। এই মেকআপে চোখের নিচে এবং ওপরের পাতায় প্রথমে হালকা শেডের কোনো কনসিলার ব্যবহার করা হয়। কনসিলারের পরিবর্তে ইচ্ছে করলে লাইট ফাউন্ডেশনও ব্যবহার করা যায়।

ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে কনসিলার বা ফাউন্ডেশন। ওপরে ব্যবহার করা যায় ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার। স্মোকি মেকআপে উপযুক্ত কনট্রাস্ট তৈরির জন্য অনেকে হালকা শিমারও ব্যবহার করে থাকেন। তারপর আঁকতে হবে চোখ। এজন্য প্রয়োজন আইপেন্সিল এবং আইলাইনার। আইপেন্সিলের সাহায্যে চোখের নিচে ভেতরের কোণ থেকে শুরু করে বাইরের কোণের ওয়াটারলাইন বরাবর রেখা টানতে হবে। চোখ আঁকার ক্ষেত্রে যাদের হাত কাঁপে না তারা পেন্সিলের পরিবর্তে আইলাইনারও ব্যবহার করতে পারেন। আই পেন্সিলের সুবিধা হচ্ছে এর খুব হালকা স্পর্শেই প্রয়োজনীয় শেড যেমন পাওয়া যায় তেমন লাইন আঁকাবাঁকা হওয়ার ভয়ও থাকে না। তারপর দশ থেকে পনের সেকেন্ডের জন্য চোখ চেপে বন্ধ করে রাখতে হবে। তাতে চোখের নিচের পাতার ওয়াটারলাইন বরাবর যে লাইনার দেয়া হয়েছিল, তার বাড়তি অংশ ওপরের পাতায় লেগে যাবে। ফলে ওপরের পাতায় লাইনারের অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে। চোখ ছোট হলে রেখা টানতে হবে চোখের পাতার মাঝ বরাবর থেকে চোখের বাইরের অংশ অব্দি। আর বড় হলে এক কোল থেকে অন্য কোণ পর্যন্ত টানতে পারেন লাইনার। চোখের ওপরের ওয়াটারলাইন বরাবর লাইনারের কাজ শেষ করে একই পেন্সিল দিয়ে পাপড়ির গোড়াতেও আইলাইনার লাগাতে হবে। খুব ভালোভাবে চেপে চেপে লাগাতে হবে, যেন রেখা খুব গাঢ় হয়। ভালো হয় চোখের ওপরের পাতার চেয়ে চোখের নিচের অংশের কাজ আগে শুরু করলে। কারণ স্মোকি আইজ মেকআপে ওপর এবং নিচের পাতার সাজ দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে পেন্সিল ব্যবহারে খুব একটা সাবধানতার প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে লাইন স্ট্রেট এবং নিখুঁত হচ্ছে কিনা এ মেকাপে সেটা খুব জরুরি বিষয় নয়। লাইন আঁকা শেষ হলে একটা নরম ব্রাশ বা আঙুলের সাহায্যে লাইনারের শেডকে চোখের পাতার ওপরে ভালো করে স্মাজ করে দিতে হবে। এ মেকআপে চোখের পাপড়ির গোড়ায় শেড সবচেয়ে গাঢ় হতে হয়। ব্যস তৈরি হয়ে গেল স্মোকি আই মেকাপের প্রাথমিক বেইজ। এরপর দিতে হবে শেড, যুক্ত করতে হবে এক্সট্রা টোন। সাধারণত অ্যাশ, ব্ল্যাক, গ্রিন, ব্লু, চকোলেটে এ ধাঁচের ডার্ক শেড ব্যবহার করা হয়। ডার্ক শেড ব্যবহারের পর ব্যবহার করা হয় লাইট শেড। প্রথমে শ্যাডো ব্রাশের সাহায্যে ব্ল্যাকিশ শেডগুলো ওপরের পাতায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। তারপর আঙুলের সাহায্যে স্মাজ করে দিতে হবে। তারপর এর ওপরেই ব্যবহার করতে হবে অপেক্ষাকৃত লাইট শেডটি। এর জন্য দরকার হবে অন্য একটি বড় ব্রাশ। এর ফলে আগের ডার্ক শেড এবং পরের লাইট শেড মিলিয়ে চোখের অন্যরকম এক আবহের সৃষ্টি হয়। খেয়াল রাখতে হবে, ব্রাশ বা আঙুল ব্যবহারে যেন সফটনেস থাকে। তাতে লুকেও একটা সফটনেস চলে আসে। তাছাড়া আইশ্যাডো লাগানোর ক্ষেত্রে চোখের কোণে ঠিকমতো শ্যাডো লাগছে কিনা, সেদিকেও নজর দেয়া জরুরি। এর ওপর ব্যবহার করুন ব্লু কিংবা ডার্ক গ্রিন। তাতে লুক হয়ে উঠবে আরও ড্রামাটিক। এই শেডকে এক্সট্রা ডাইমেনশন শ্যাডো হিসেবেও ধরা হয়। স্কিন টোনের চেয়ে একটু গাঢ় শেড ও আইপেন্সিলের ওপরে ব্যবহার করা ব্রাশ দিয়ে এই শ্যাডো চোখের পাতায় লাগাতে হবে। তবে খুব বেশি মোটা করে নয়, খুব পাতলা করে লেয়ারগুলো লাগাতে হবে। না হলে একের পর এক লেয়ারের জন্য চোখের পাতা ভারি এবং মোটা লাগতে পারে।

স্মোকি আই মেকাপে এখন নতুন যোগ হয়েছে মেটালিক ট্রেন্ড। বিশেষ করে উৎসব কিংবা পার্টিতে চোখকে অনেক বেশি হাইলাইট করার জন্য এখন মেটালিক স্মোকি আই মেকাপের সাহায্য নেয়া হয়। তাতে ব্ল্যাকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় মেটাল টোনের নানারকম শেড। তাছাড়া চেহারায় উজ্জ্বলতা নিয়ে আসতে দরকার পড়ে হাইলাইটারের। সিলভার শেডের আরেকটি এক্সট্রা ডাইমেনশন আইশ্যাডো ব্যবহার করা হয় এ কাজে। সরু পেন্সিল ব্রাশের সাহায্যে চোখের ভেতরের কোণকে এই শ্যাডো দিয়ে হাইলাইট করে তোলা যায়। শ্যাডোর সামান্য এই ব্যবহার চোখের মেকআপের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।

মাশকারা ব্যবহার করুন সবার শেষে। এই মেকাপে চোখের পাপড়িতে ভারি মাশকারা লাগানো খুবই জরুরি। ব্রাউন, গ্রিন, ব্ল্যাক এই তিন রঙের লেয়ার সৃষ্টি করেও মাশকারা ব্যবহার করা হয় অনেক সময়। তারপর হালকা পাফ ব্যবহার করে চোখের নিচের অংশ ভালো করে মুছে ফেলুন। মেকাপ কমপ্লিট। তবে স্মোকি আই মেকাপের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপার মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে চোখটাকে স্মোকি করে তুলতে মুখের অন্যান্য অংশের মেকাপ যেন খুবই হালকা হয় সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন। ঠোঁটে লিপস্টিক না ব্যবহার করা ভালো, করলেও গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে একেবারেই হালকা কোনো রঙ। সবচেয়ে সুন্দর দেখায় লিপগ্লস ব্যবহার করলে। প্রতিদিনকার আয়নায় দেখা নিজের চেহারাকে একটু অন্যরকম করে তুলতে চাইলে এ মেকাপ একেবারে যথার্থ দাওয়াই। নিয়ম জানা থাকলে ঘরে বসেই যে কেউ করে ফেলতে পারেন। কেউ যদি অনেক বেশি ড্রামাটিক ইফেক্ট তৈরি করতে চান, তাহলে আইল্যাশগুলো কিছুটা কার্ল করে নিতে পারেন। তারপর মাশকারার কোট লাগিয়ে নিলেই হলো। লুক পাল্টে যাবে নিমেষেই, অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হয়ে ওঠাও হবে সহজে।

অনেকেই প্রশ্ন করেছেন চোখের স্মোকি আই লুকের জন্য....... তাদের জন্য ভিডিও
ডার্ক স্মোকি আই উইথ নুড লিপ্স মেকাপটি ঝটপট শিখে নে বিউটি এক্সপার্ট তানিয়া অপরাজিতার কাছ থেকে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন