সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৪

লোম থেকে মুক্তি

Silk-épil 7 Dual 7891পুরুষের গায়ের লোমের আধিক্য পৌরুষ বাড়ালেও নারীর গায়ের লোমের আধিক্য মোটেই কাম্য নয়। সাধারণত শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণে কোন কোন নারীর হাতে, পায়ে অথবা ঠোঁটের উপর অবাঞ্ছিত লোম দেখা দিতে পারে। এ নিয়ে তাকে বিড়ম্বনার চূড়ান্তে পৌঁছতে হয়। শুধু মুখেই না; গলায়, বুকে, পেটে এই অবাঞ্ছিত লোম দেখা দিতে পারে। এই অবাঞ্ছিত লোম কোন ওষুধের রি-এ্যাকশন হিসেবেও হতে পারে। একেক স্থানের লোম তোলার একেক পদ্ধতি। আমরা ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক

সময় লোমকে বাড়িয়ে তুলি। যেমন ঠোঁটের উপরের লোম যদি টুইজার বা চিমটা দিয়ে তোলা হয় তাহলে রোমের গোড়ায় হরমোনের অতিরিক্ত স্টিমিউলেশনের ফলে লোম বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঠোঁটের উপরের লোম তুলতে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। বুক, পেটের ক্ষেত্রেও এই ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তবে অতিরিক্ত লোম দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। আর লক্ষ্য রাখতে হবে, লোম কমাতে গিয়ে যেন লোম বাড়িয়ে না ফেলি। শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অনেকটা বংশগত। খুব ছোটবেলা থেকে লক্ষ্য করলে এটা রোধ করা যায়। নারিকেলের নাড়ু তৈরি করার পর যে তেল বের হয় তা বাচ্চা মেয়েদের হাতে, পায়ে, মুখে, রোমের উল্টাদিক বরাবর ঘষে ঘষে মাখিয়ে দিলে বড় হলে আর অবাঞ্ছিত রোমের সমস্যা থাকে না। লোম তোলার কিছু কার্যকর পদ্ধতি নিচে দেয়া হলো। যার যার সুবিধামতো পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

থ্রেডিং

এই পদ্ধতিতে সাধারণত ভ্রূ এবং ঠোঁটের উপরের লোম তোলা হয়। একটি সুতো দিয়ে, তার প্যানের কৌশলে লোম তোলাকে থ্রেডিং বলে। থ্রেডিং সাধারণত নিজেরটা নিজে করা যায় না। বিউটি পার্লারে গিয়ে করতে হয়।

টুইজিং বা প্লাকিং

এ পদ্ধতিতেও সাধারণত ভ্রূর লোম তোলা হয়। যাঁরা বাড়িতে করবেন তাঁরা ম্যাগনিফাইং গস্নাস নিয়ে যথেষ্ট আলো আছে, এমন জায়গায় বসে ভ্রূ প্লাক করবেন। ভ্রূ প্লাক করার আগে মুখ ভালভাবে ধোবেন এবং টুইজার বা চিমটাও ভালভাবে ধোবেন। প্লাক করার সময় ব্যথা লাগলে পস্নাকিং-এর আগে একটু গরম জলে ভেজানো তোয়ালে মুখের উপর দিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন, পস্নাকিং-এ সুবিধা হবে। প্লাকিং করলে লোম খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। আর টুইজার দিয়ে লোম কখনও একেবারে গোড়া থেকে তোলা যায় না। রোমের শেষ সাদা বিন্দুটিই গোড়া নয়। ওই সাদা বিন্দুটির উপস্থিতির কারণ আপনার সুস্বাস্থ্য।

শেভিং

সাধারণত হাত, পা ও বাহুমূলের লোম তুলতে অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতেই খুব সহজে, তাড়াতাড়ি লোম তোলা গেলেও আবার যখন লোম ওঠে তখন তা খুব শক্ত ও ধারালো হয়। শেভ করলে তা নিয়মিত করতে হবে। ৰুর বা রেজার দিয়ে শেভ করলে শেভ করা স্থানে পানিতে ভিজিয়ে সাবান দিয়ে নেবেন তাহলে রেজার টানতে সুবিধা হবে। যেমন_ পায়ের ৰেত্রে হাঁটু থেকে গোড়ালির দিকে টানবেন। শেভিং করে লোম খুবই সাময়িক এবং দু'দিনের মধ্যেই আবার লোম উঠে যায়। মুখ বা বুকে কখনও রেজার ব্যবহার করবেন না।

হেয়ার রিমুভিং ক্রিম

বাজারে অনেক ব্রান্ডের হেয়ার রিমুভিং ক্রিম পাওয়া যায়। এই ক্রিমে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা লোম তুলতে সাহায্য করে। এসব পদার্থ রোমের প্রোটিন স্ট্রাকচার পাল্টে ফেলে লোম তুলতে সাহায্য করে। ফলে লোম কতদূর উঠবে তা নির্ভর করে ক্রিম রোমের কত গভীরে পৌঁছাল তার ওপর। এই পদ্ধতিতে লোম তোলা হলে পরবর্তীতে যে লোম বের হবে তা হয় কমনীয়। কিন্তু লোম গজানো বন্ধ হবে না। এই ক্রিম মুখে, বুকে বা ভ্রূতে ব্যবহার করবেন না। তবে ব্যবহার করার আগে সামান্য একটু হাতে লাগিয়ে দেখতে পারেন আপনার ত্বকে তা সহ্য হয় কি-না। অনেকের এ্যালার্জি বা র্যাশ বের হয়। তেমন সমস্যা দেখা দিলে ব্যবহার করবেন না। প্যাকেটের গায়ে লেখা ব্যবহারবিধি মেনে চলুন।

ওয়্যাক্সিং

লোম তোলার সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হলো ওয়্যাক্সিং। কয়েক বার ওয়্যাক্সিং করলে রোমের বৃদ্ধি কমে আসে। কারণ এটা লোমকে একেবারে গোড়া থেকে তুলে আনে। পার্লারে যেতে না পারলে ওয়্যাক্স কিনে বাড়িতে বসেই তৈরি করতে পারেন। ওয়্যাক্স দুই ধরনের_ হট এবং কোল্ড। কোল্ড ওয়্যাক্স তেমন কাজ করে না। একটু গরম করে হট ওয়্যাক্স হিসেবে ব্যহার করলে বেশি কাজ হয়। বাড়িতেও ওয়্যাক্স তৈরি করা যায়। এ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে ২৫০ গ্রাম অথবা ৫০০ গ্রাম গুড় নিয়ে ৩/৪টা পাতি লেবুর রস আর কিছুটা পানি মিশিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। কিছুৰণ পর একটা পাত্রে কয়েক ফোঁটা ওয়্যাক্স ফেলে দেখুন। যদি ওয়্যাক্স সোজা ডুবে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ওয়্যাক্স তৈরি হয়ে গেছে। এবার একটু মাখন লাগানোর ছুরি দিয়ে হাতে, পায়ে ওয়্যাক্স লাগিয়ে তার ওপর একটা কাপড়ের টুকরো চেপে দিন। এবার কাপড়ের প্রানত্ম ধরে রোমের মুখ যেদিকে তার উল্টাদিকে টানলেই লোম উঠে আসবে। এ পদ্ধতিতে চামড়ার উপরের সত্মরের কিছু মৃত কোষও উঠে আসবে। ওয়্যাক্স করার পর সে জায়গাটা তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে ফেলুন। কোন এ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগান। যাদের চামড়া খুব স্পর্শকাতর তাদের এ পদ্ধতি না করাই ভাল। আর করলেও অবশ্যই কোল্ড ওয়্যাক্স করবেন। চামড়ায় কোন এ্যালার্জি বা ইনফেকশন থাকলে ওয়্যাক্সিং করা উচিত নয়। মুখের চামড়ায় ওয়্যাক্সিং না করাই ভাল।

ইলেক্ট্রোলিসিস

এ পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে লোম তোলা সম্ভব। অভিজ্ঞ বিউটিশিয়ানের সাহায্যেই কেবল এটা করা সম্ভব। ইলেক্ট্রোসিস-এ যন্ত্রের সাহায্যে রোমের গোড়ায় অল্প বৈদ্যুতিক কারেন্ট দেয়া হয়। এতে রোমের গোড়া পুড়ে যায়। ফলে লোমটি মারা যায়। যাদের ত্বক স্পর্শকাতর তাদের এ পদ্ধতিতে ব্যথা লাগতে পারে। মাঝেমধ্যে এ পদ্ধতিতে রোমের গোড়া ফুলে উঠতে পারে তবে তা কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ঠিক হয়ে যায়। এ পদ্ধতি কিছুটা সময়সাপেৰ এবং ব্যয়সাপেৰ। কারণ এ পদ্ধতিতে লোম তুলতে হলে কয়েকটা সিটিং দরকার। মুখের রোমের ৰেত্রেই সাধারণত ইলেক্ট্রোলিসিস করতে বলা হয়। কারণ হাত, পা ইত্যাদি ৰেত্রে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করলেও চলে। কান বা নাকের ভেতরের লোম তুলতে কখনও এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন না। চোখের পাতা, তিলের রোমের ৰেত্রেও এ পদ্ধতি ব্যবহার করা অনুচিত। ডায়াবেটিস বা হরমোন সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকলে এ পদ্ধতি অবলম্বন করবেন না। ডাক্তার বা অভিজ্ঞ বিউটিশিয়ানের পরামর্শ ছাড়া এ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন